চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার- নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার কিভাবে করবেন এটা নিয়ে চিন্তিত, চলুন জেনে নিই সঠিক পদ্ধতিতে চর্মরোগে নিম পাতার ব্যাবহার করার নিয়ম। প্রাচীন কাল থেকেই ভেষজ ঔষধ হিসাবে চর্মরোগের চিকিৎসায়, এলার্জির চিকিৎসায়, চুলকানির চিকিৎসায়, ব্রণের চিকিৎসায় এবং আরো বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় নিমপাতার ব্যাবহার হয়ে আসছে।
চর্মরোগে নিমপাতার ব্যাবহার অত্যান্ত সহজ। চর্মরোগ সহ আরো যেসকল ত্বকের রোগ আছে সেগুলোতে নিমপাতার ব্যাবহার করতে পারবেন। নিমপাতার ব্যাবহারে এমন সব উপকার পাবেন যা আপনে শুনলে অবাক হয়ে যাবেন। তো বন্ধুরা আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক চর্মরোগে নিমপাতার ব্যাবহার এবং নিমপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা। জানতে হলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
পেজ সূচিপত্রঃ চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার?
ভূমিকা
নিম হলো বহুবর্ষজীবি গাছ। এর বিজ্ঞান সম্মত নাম হলো অ্যাজাডি র্যাকটা ইন্ডিকা। নিম গাছে ফাল্গুন মাসে কচি পাতা এলেই এর কচি পাতা শাক হিসাবে বেগুনের সাথে ভেজে খাওয়া শুরু হয়। গরম ভাতের সাথে নিমপাতা ভাজা ও বেগুন ভাজু খুবই মজা।
এছারাও কাঁচাকলা, পেঁপে, আলু, বেগুন, ও সজনে ডাঁটার সাথে নিমপাতা মিশিয়ে শুক্তোর ঝোল করে ও খেতে পারেন। কচি পাতায় তেতো স্বাদ থাকায় এটি শরীরের পক্ষে খুবই উপকারি। কচি পাতায় প্রচুর পরিমানে লোহা থাকায় এটি রক্ত স্বল্পতায় দারুন কাজ করে।
নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা?
নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য হবেন। কবি নিম পাতাকে এবং নিম গাছকে ঔষধের সাথে তুলনা করেছেন যার বাসায় একটি নিম গাছ থাকবে তার বাসায় থাকবে না নিম গাছ স্বাস্থ্যের জন্য এত বেশি উপকারী।
যে শুধুমাত্র নিম গাছের পাতা ডাল ব্যবহার করে আপনার শরীর থেকে যাবতীয় রোগবালাই দূর করা সম্ভব। তবে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে। যে কোন জিনিষ শরীরের জন্য অতিরোক্ত ভালো না। নিমপাতার একটি নিজস্ব জীবানুনাশক গুন আছে। হাম, বসন্ত, চুলকানি, এলার্জি,
চর্মরোগ সারাতে নিমপাতার দারুন কার্যকরী। নিমপাতার রক্তপরিষ্কারক গুন ও রয়েছে। এছারাও কৃমি দুর, পাকস্থলির সমস্যা এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগ সারাতে নিয়মিত নিমপাতা খাওয়া বেশ উপকার। চলুন জেনে নিই নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা।
নিম পাতার উপকারিতা সমূহ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে
যারা ডায়াবেটিস এ ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে ৮-১০ টা নিমপাতা ও ৩-৪ টা গোলমরিচ চিবিয়ে খেলে এবং খাওয়া দাওয়া সংক্রান্ত সকল নিয়ম মেনে চললে রক্তের শর্করার মাত্রা সহজেই কমে আসবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
কৃমি দুর করে
বড় মানুষ অথবা ছোট বাচ্চা যে কারো পেটে কৃমি হলে নিমপাতা ভাজা ভাতের সাথে অথবা কাচা পাতা রস করে সকালে খেলে কৃমি সহজেই দুর হয়ে যাবে। এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা গুলো ভালো হয়ে যাবে।
রক্ত পরিষ্কার করে
নিয়মিত নিমপাতার রস প্রত্যেকদিন সকালে খাওয়ার অভ্যাস করলে রক্ত পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং রক্তের শর্করার মাত্রা কমে আসবে। নিমপাতায় রয়েছে রক্ত পরিস্কারক গুন।
চুলকানি দুর করে
যাদের চুলকানির মতো সমস্যা গুলো আছে তারা নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ মিহি করে বেটে শরীরে মাখলে শরীরের চুলকানি দুর হয়ে যাবে এবং শরীরের উজ্জলতা বেড়ে যাবে। যতদিন চুলকানি থাকবে ততদিন মাখতে হবে।
চর্মরোগ ও অ্যালার্জি দুর করে
চর্মরোগ ও অ্যালার্জি দুর করতে নিমপতা বেশ কার্যকরী ভৃমিকা পালন করে। যাদের চর্মরোগ ও অ্যালার্জি আছে তারা প্রত্যেকদিন গোসলের সময় পানিতে নিমপাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিবেন যতক্ষন পানির রং হলুদ হবে না। ততক্ষন ফুটিয়ে পানি কুসুম গরম অবস্থায় গোসল করবেন। সাবান বা শাম্পু দেওয়া যাবে না।এভাবে কয়েক সপ্তাহ গোসল করবেন দেখবেন চর্মরোগ ও অ্যালার্জি দুর হয়ে যাবে।
দৃষ্টি শক্তির উন্নতি করে
নিয়মিত অল্পপরিমানে (প্রায় ৫-৬ ফোটা ) নিমপাতার রস এক কাপ দুধে মিশিয়ে কুসুম গরম খেলে দৃষ্টি শক্তির উন্নতি হবে। যারা অস্পষ্ট এবং আবছা দেখেন তাদের চোখের বেশ উপকার হবে।
বদহজম দুর করে
যাদের বদহজমের মারাত্বক সমস্যা আছে বা পাকস্থলির গন্ডগোলের জন্য বদহজম হলে অল্প পরিমানে নিমগাছের ছাল গরম পানিতে রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে সেই পানিটা ভালো করে ছেকে খেলে বদহজম দুর হয়ে যাবে। নিয়মিত খেতে হবে।
বসন্ত রোগ ভালো করে
বসন্ত কালে নিমপাতার ভাজা খেলে হাম বসন্ত ইত্যাদি রোগ হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। মাঘ মাসের শেষের দিকে ৭ টি নিমপাতা ও ৭টি মসুর ডাল একত্রে চিবিয়ে খেলে বসন্ত রোগ হয় না।
মাথার খুশকি ও উকুন দুর করে
মাথায় খুশকি ও উকুন হলে নিমপাতা বেটে তাতে পানি দিয়ে তেলের মতো করে মাথায় লাগাবেন সপ্তাহে ৩-৪ দিন। এভাবে মাথায় নিমপাতা বাটা লাগান তাহলে কয়েক সপ্তাহে খুশকি ও উকুন সহজেই দুর হয়ে যাবে।
ভাইরাস দুর করে
হাম, পক্স, বসন্ত জাতীয় ভাইরাস গুলো সহজেই দুর করে নিমপাতা। হাম, পক্স ও বসন্ত জাতীয় ভাইরাস গুলো দেখা দিলে নিমপাতা পানিতে দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে সেই পানি হালকা কুসুম গরম অবস্থায় গোসল করবেন দেখবেন ভাইরাস দুর হয়ে যাবে।
পোকা মাকরের কামরের ব্যাথা দুর করে
কোন বিশাক্ত পোকা( সাপ ব্যাতিত) কামর দিলে সেখানে নিমপাতা বেটে অথবা নিমপাতার শিকড় বেটে লাগিয়ে রাখলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এবং পোকার কামড়ে যে জীবাণূ হয় তা ধংস হয়ে যায়।
দাঁতের রোগ দুর করে
প্রত্যেকদিন নিমপাতার ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের গোড়া শক্ত মজবুত হয় এবং দাতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। শুধু ্তাই নয় দাতের যে সকল দন্ত রোগ থাকবে সকল রোগ ভালো হয়ে যাবে।
বাতের ব্যাথা দুর করে
নিমপাতার তেল বাতের ব্যাথার জন্য খুবই কার্যকরী। বাতের ব্যাথায় নিমপাতার তেল ভালো করে মালিশ করলে ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে। নিমপাতার তেল বাড়িতে তৈরী করতে পারবেন। নিমপাতার ডাল, ছাল, পাতা এবং বীজ থেকে তেল তৈরী করতে পারবেন।
আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন নি ম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে নিমপাতা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহার করে গোসল করলে আপনার গায়ে করে চুলকানি থাকবে না গায়ে কোন এলার্জির সমস্যা থাকবে না পোকামাকড়ের কামড়ের ব্যথা দূর হবে।
অনেকে শরীর ব্যথা করে ঘাড় ব্যথা করে নিম পাতা পানির মধ্যে দিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর ব্যথা ঘাড় ব্যথা দূর হয়ে যাবে নিমপাতা ওষুধের মত কাজ করে এমনকি কবিরা বলেন যে নিম পাতা ওষুধের চেয়েও অনেক ভালো কাজ করে।
ঔষধের কাজ শুরু হতে এক থেকে দুই দিন সময় লাগে কিন্তু নিম পাতার কাজ শুরু হতে কয়েক সেকেন্ড লাগে। অতএব আপনি যেকোনো রোগ বালাইকে সারিয়ে ফেলতে পারবেন শুধুমাত্র নিমপাতা ব্যবহার করে তাই বাসায় বেশি বেশি নিমপাতার গাছ লাগান এবং নিজের পাশাপাশি নিজের পরিবারের মানুষকেও সুস্থ রাখুন। এবার চলুন দেখে আসি নিম পাতার অপকারিতা
নিম পাতার অপকারিতা
নিম পাতার উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে যদি অতিরিক্ত নিম পাতা ব্যবহার করা হয় কিংবা অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়া হয় তাহলে স্বাস্থ্যের কিছু ক্ষতি হতে পারে। আসুন আমরা দেখে নেই নিম পাতার অপকারিতা গুলো।
- অহেতুক খালি পেটে দীর্ঘদিন ধরে নিমপাতা খাবেন না। যদি কোন শারিরীক সমস্যা না থাকে। তাহলে উপকারের চেয়ে অপকারিতা হতে পারে।
- নিমপাতার রস খাওয়ার পরে কারো কারো বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি হতে পারে। তৎক্ষনিক নিমপাতার রস খাওয়া বন্ধ করে দিবেন।
- কোন অপারেশন করার আগে নিমপাতার রস খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
- নিমপাতা যেমন উপকার তেমন এর মারাত্বক একটি ক্ষতিকর দিক আছে। সেটা হলো প্রত্যেকদিন নিমপাতার রস খাওয়ার ফলে বন্ধ্যাত্বর কারণ হতে পারে। এই জন্য যারা বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন তারা নিমপাতার রস খাবেন না। তবে নিমপাতা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারবেন।
- যাদের শরীরের রক্ত কম, রক্ত পাতলা তারা নিমপাতা খাওয়া থেকে দুরে থাকবেন।
- যারা গর্ভবতী তারা নিমপাতা খাওয়া থেকে দুরে থাকবেন।
বিঃদ্রঃ যারা নিমপাতা খাওয়ার জন্য আগ্রহী তারা দিনে ২-৪ টি করে নিমপাতা খেতে পারবেন। বেশি পরিমানে খাওয়া ঠিক হবে না। এতে উপকারের চেয়ে মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে। তবে নিমপাতার রস খাওয়াই তেমন কোন মারাত্বক ক্ষতি নেই তবে নিয়ম মেনে খাওয়াটাই ভালো হবে। আর একটানা প্রত্যেকদিন খেতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। আরর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার?
চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার- নিম পাতায় রয়েছে প্রচুর ঔষুধি গুন। নিম গাছের পাতা, বাকল, ফুল, ফল এবং শিকর সব কিছুতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। আন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট যুক্ত নিম ত্বকের সব রোগের জন্য ব্যাবহারিত হয়ে থাকে। চর্মরোগে নিমপাতার ব্যাবহার জেনে নিই।
চর্মরোগে নিমপাতার ব্যাবহারঃ
নিমপাতা ভালো করে বেটে তাতে কাঁচা হলুদ বেটে ভালো করে পেষ্ট করে সারা শরীর লাগিয়ে রাখবেন ২০-৩০ মিনিট ধরে। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন লাগাবেন চর্মরোগ ভালো হয়ে যাবে। তাছারাও নিমপাতা পানিতে দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিবেন তারপরে সেই পানি হালকা কুসুম গরম অবস্থায় গোসল করে নিবেন। সাবান শাম্পু ব্যাবহার করা যাবেনা। চর্মরোগ নিরাময় হয়ে যাবে।
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার?
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার- শরীরে বিভিন্ন ধরনের খোসা, পচরা, ঘা, দাদ, চুলকানি ইত্যাদি হয়ে থাকে। ত্বকের এই সব রোগের জন্য নিমপাতার ব্যাবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। চুলকানিতে নিমপাতা কিভাবে ব্যাবহার করবেন জেনে নিন।
চুলকানিতে নিমপাতার ব্যাবহারঃ
গোসল করার আগে টাটকা নিমপাতা বেটে গোটা শরীরের লাগিয়ে রাখতে হবে। তাছারাও এক মুঠো নিমপাতা পানিতে দিয়ে গরম করে সেই পানি কুসুম গরম থাকা অবস্থায় গোসল করে নিলে চুলকানিতে ভালো ফলাফল পাবেন। এভাবে আপনি সপ্তাহে ৩-৪ দিন নিমপাতার ব্যাবহার করবেন দেখবেন কয়েক সপ্তাহে চুলকানি ভালো হয়ে যাবে।
চোখের চুলকানিতে নিমপাতার ব্যাবহার
অনেক সময় অ্যালার্জির কারনে বা অন্য কোন কারনে চোখ প্রচুর চুলকায়। চোখ চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে চোখ ফুলে যায়। এ সময় প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে নিমপাতার ব্যাবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন। চোখের চুলকানিতে নিমপাতা ব্যাবহার করবেন যেভাবে সেটা হলো, নিমপাতা ও পানি গরম করে ঠান্ডা করে নিতে হবে তার পরে সেই পানি চোখে জোরে জোরে ঝাপটা মারতে হবে। এভাবে দিনে ২-৩ বার নিমপাতার পানি দিয়ে চোখ ধুবেন দেখবেন চুলকানি অনেকটা সেরে যাবে।
এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার?
এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার- এলার্জির কারনে শরীরের চুলকানি এতো হয় যে, চুলকাতে চুলকাতে অস্থির হয়ে যায় মানুষ। এলার্জির কারনে বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে বন্চিত হয়ে থাকতে হয়। যেমন, হাসের মাংস, গরুর মাংস, হাসের ডিম, চিংড়ী, মসুর ডাল, বেগুন, কচু, ইলিশ মাছ, দুধ, ইত্যাদি মজাদার খাবার গুলো খেতে পারে না এলার্জি আক্রান্ত মানুষ। এই খাবার গুলো খেতে হলে এলার্জিকে চিরবিদায় জানাতে হবেই।
এলার্জিকে চিরবিদায় জানাতে পারে একমাত্র নিমপাতার ব্যাবহার। কিভাবে এলার্জিতে নিমপাতার ব্যাবহার করতে হবে এবং এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে জেনে নিই। প্রায় ১ থেকে দের কেজি নিমপাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকনো নিমপাতা গুলো বিলিনডারে অথবা শিল নোরা দিয়ে বেটে ভালো করে গুরো করে নিতে হবে এবং বয়ামে সংরক্ষন করতে হবে।
ব্যাবহারের নিয়মঃ
এক গ্লাস ঠান্ডা পানির মধ্যে এক চামুচ নিমপাতা রাতে শোয়ার আগে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং সকালে সেই পানি পান করতে হবে। সকালে খালি পেটে, দুপুরে খাওয়ার পরে এবং রাতে খাওয়ার পরে নিমপাতা খেতে পারবেন। এভাবে এক থেকে দুই মাস খেতে থাকুন এলার্জি চিরবিদায় জানাবে।
ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার?
ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার- নিমপতায়, নিমফুলে, নিম বাকল এবং শিকরে রয়েছে প্রচুর ভেষজ গুন এবং আন্টি-ব্যাকটেরিয়াল যা ত্বকের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। ত্বকের ব্রণ, দাগ এবং ফুস্কুরি সারাতে নিমপাতার বিশেষ ভৃমিকা পালন করে। ব্রণ হলে নিমপাতা কিভাবে ব্যাবহার করতে হয় তা বিস্তারিত দেওয়া হলো-
- ব্রণ দুর করার জন্য নিমপাতা বাটা, গোলাপ জল তার সাথে লেবুর রস কয়েক ফোটা ভালো করে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ব্রন ভালো হয়ে যাবে।
- শীতে ব্রন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিমপাতার প্যাক ব্যাবহার করতে পারেন। নিমপাতা গুরো, সাথে ১ চামুচ বেসুন এবং ১ চামুচ টকদই ভালো করে মিশিয়ে মুখে এবং গলায় লাগিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
- নিমপাতা বাটা, কাঁচা হলুদ বাটা, লেবুর রস, কাচা দুধ ভালো করে মিশিয়ে ব্রণের উপরে কয়েক মিনিট ধরে ঘুষতে থুকন ভালো ফলাফল পাবেন।
- নিমপাতা সিদ্ধ করে পেস্ট তৈরী করে মুখে লাগিয়ে রাখবেন কয়েক মিনিট। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েক সপ্তাহ দিলে ব্রণের দাগ দুর হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও অপকারিতা
আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন নিম পাতা স্বাস্থ্যের জন্য কত উপকারী। নিম পাতা ব্যবহার করে আপনি ত্বক সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা দূর করতে পারবেন যেমন চোখ চুলকানি চোখ লাল হয়ে যাওয়া ত্বকের চুলকানি ত্বকে লাল লাল রেস ব্রণ তৈরি হওয়া। আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন নিম পাতা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী এবার চলুন আমরা দেখে আসি চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার।।
চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার?
চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার- নিমপাতায় রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা স্ক্যাল্পের টক্সিন বের করে দেয়। ফ্রি র্যাডিকালসের বিরুদ্ধে লড়াই চালায়। যার ফলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা কমে যায় ফলে চুলের নানান সমস্যা গুলো নিয়ন্ত্রনে থাকে। তবে তার জন্য জানতে হবে চুলের যত্নে নিমপাতার ব্যাবহার। চুলের যত্নে নিমপাতার ব্যাবহার কিভাবে করবো তা নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো।
নিমপাতা ভালো করে বেটে তাতে টক দই, অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। তারপরে চুলে এবং মাথায় তেলের মতো করে দিতে হবে। এভাবে এক থেকে দের ঘন্টা রাখুন তারপরে শাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
- মাথার ত্বকে চুলকানি, খুশকি এবং জ্বালা দুর করতে নিমপাতার রস ব্যাবহার করতে পারেন। নিমপাতা ভালো করে বেটে রস বের করে নিতে হবে। তাতে এক থেকে দুই ফোটা টি-ট্রি অয়েল মেশাতে হবে। ভালো করে মাথায় ম্যাসাজ করুন ১ ঘন্টা রাখার পরে ধুয়ে ফেলুন ভালো ফলাফল পাবেন।
- চুল এবং স্কাল্পের স্বাস্থ্য ভালা রাখার জন্য নিমপাতার রস নিয়মিত ব্যাবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
- নিমপাতা গরম পানি দিয়ে ফুটিয়ে গোসলের সময় ঐ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত ধুতে হবে।
আশা করছি আপনারা সকলে বুঝতে পেরেছেন চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে যদি নিম পাতা ব্যবহার করে চুলকে সুন্দর করতে চান তাহলে উপরের এই উপায় গুলো অনুসরণ করুন বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মেয়েরা এখন চুল নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত থাকে, চুল পড়া সমস্যা নিয়ে ঘুরতে থাকে।
চুল পড়া সমস্যার জন্য নিম পাতা অতি কার্যকরী একটি উপাদান নিয়মিত নিম পাতার রস তুলে ব্যবহার করলে চুল থেকে খুশকি দূর হবে এতে চুল পড়ার সমস্যা অনেক কমে যাবে। এবার চলুন আমরা দেখে আসি খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়।
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়?
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়- প্রায় মানুষই নিমপাতার রস খেয়ে থাকেন। কিন্তু খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষই বাইরের খাবার বেশি পছন্দ করে থাকেন। বাইরের খাবার খেয়ে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই সমস্যা গুলো নিম পাতার রস খেয়ে কিছুটা কমানো যাবে। নিমপাতার রস খেলে সংক্রামিত জীবাণু গুলো ধংস হয়ে যাবে। খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে কি হয় জেনে নিন।
- খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে লিভার ভালো থাকে। কারণ নিমপাতায় আছে প্রদাহ রোধী উপাদান।
- খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে ব্লাড সুগার রোগীদের জন্য খুবই ভালো। নিমপাতার রস খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিক কন্ট্রল রাখে।
- নিমপাতায় আছে ফাইবার। যা পেটের সমস্যা গুলো সহজেই দুর করে। খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়ে যায়।
প্রিয় পাঠক কেউ কেউ মনে করেন ঔষধি গুন সম্পন্ন এই নিমপাতা বেশি পরিমানে সেবন করলে বা ব্যাবহর করলে আরো বেশি ফলাফল পাওয়া যাবে তবে ঠিক না কথাটা। নিয়ম মেনে পরিমান মতো সেবন করার চেষ্টা করতে হবে। অতিরোক্ত ব্যাবহারে হিতে বীপরীত হতে পারে।
নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম?
নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম- দিনে ২-৩ টি নিমপাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। অতিরোক্ত সময় ধরে নিমপাতার রস খাওয়া ঠিক নয়। এতে অনেক সমস্যা হতে পারে। বিভিন্ন উপায়ে নিমপাতা খাওয়া যায়। নিচে নিম পাতার রস খাওয়ার উপায় গুলো দেওয়া হলো-
- নিমপাতা মিহি করে বেটে রস বের করে তাতে চিনি মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খাওয়া যায়।
- নিমপাতার রসে মিচ্রি মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- কচি নিমপাতা চিবিয়ে খাওয়া যায়।
- নিমপাতা মিহি করে বেটে রোদে শুকিয়ে বড়ি বানিয়ে খাওয়া যায়।
প্রিয় পাঠক আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা এই গেমে যদি নিম পাতার রস পান তাহলে বহু উপকার লাভ করতে পারবেন এবার চলুন আমরা দেখে নেই নিম পাতা গুড়া করার নিয়ম কি।
নিম পাতা গুড়া করার নিয়ম?
নিম পাতা গুড়া করার নিয়ম- প্রথমেই অনেকগুলো নিমপাতা গাছ থেকে পেরে অনেক গুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে প্রায় ১৫-২০ মিনিট। তারপরে নিমপাতা ভেজানো পানি গুলো পাল্টিয়ে আবার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে এবং একটা একটা করে নিমপাতা ডাল থেকে ছিরে নিতে হবে।
পানিতে ভিজিয়ে রাখার একটা কারন হলো নিমপাতার সাথে পোকা বা মাকড়সা থাকে। পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পোকা মাকরসা গুলো মারা যাবে। অনেক ভালো করে নিমপাতা গুলো পরিষ্কার করে পানি ঝরিয়ে রোদে শুকাতে হবে।
বেশি রোদ হলে ২-৩ দিনে পাতা গুলো শুকিয়ে যাবে। যখন দেখবেন পাতা গুলো হাতের মধ্যে নিয়ে চাপ দিলে মুচমুচে ভাঙ্গে যাচ্ছে তখন ব্লিন্ডার অথবা শিল নোরাতে বেটে নিতে হবে মিহি করে। বাটা হয়ে গেলে বয়ামে সংরক্ষন করতে পারেন ৬-৭ মাস ধরে। তবে বেশি দিন না সংরক্ষন করাটাই ভালো। মাঝে মাঝে রোদে শুকাতে হবে তাহলে নিমপাতার গুড়ো গুলো ভালো থাকবে। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন নিমপাতা কিভাবে গুড়ো করতে হয়।
নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম?
নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম- রাতে শোয়ার সময় এক গ্লাস পানিতে নিমপাতা গুড়ো ভিজিয়ে রাখতে হবে সকারে সেই পানি খালি পেটে খেয়ে নিতে হবে। এভাবে নিমপাতা গুড়া খেতে না পাড়লে নিমপাতার গুড়ো দিয়ে বড়ি বানিয়ে সহজেই খাওয়া যাবে।
নিমপাতার গুড়া দিয়ে বড়ি বানানোর নিয়ম?
নিমপাতার গুড়া দিয়ে বড়ি বানানোর নিয়ম- নিমপাতা রোদে শুকিয়ে ব্লিন্ডারে গুড়ো করে তাতে পরিমান মতো পানি মিশিয়ে ময়দার মতো করে মাখাতে হবে। তারপরে গোল গোল বড়ি তৈরী করে রোদে শুকিয়ে বয়ামে সংরক্ষন করতে পারবেন ২-৩ মাস।
এভাবে নিমপাতার গুড়া দিয়ে বড়ি বানিয়ে সহজেই খেতে পারবেন। এতে মুখে তিতা স্বাদটা লাগবে না। তো বন্ধুরা আপনারা যারা নিমপাতার রস বা গুড়া খাইতে পারেন না তারা বড়ি বানিয়ে খেয়ে দেখুন ভালো ফলাফর পাবেন।
লেখকের শেষ কথাঃ চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার?
প্রিয় পাঠক, আজকের এই আরর্টিকেল থেকে আমরা মূল্যবান কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম। আসলেই সত্যিই নিমপাতা একটি ভেষজ ঔষধি গুন সম্পন্ন পাতা। এই নিমপাতা দিয়ে আমাদের শরীরের অনেক রোগের প্রতিরোধ করতে পারি।
এই আরর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পারলাম,নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা,,চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার, চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার, এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার, ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার, চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার,
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়, নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম, নিম পাতা গুড়া করার নিয়ম, নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি। আরর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই পরিচিতদের মধ্যে সেয়ার করবেন। কারন তারাও জেনে হয়তো বা উপকৃত হবে। নিজে জানুন এবং অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন। তাহলে নিজেকে অপরাধি মনে হবে না। এই ধরনের আরো আরর্টিকেল পেতে ওয়েবসাইড ভিজিট করুন।
পোষ্ট ট্যাগঃ
কাদের নিম খাওয়া উচিত নয়?, নিম পাতার ক্ষতিকর দিক কি কি?, ত্বকের জন্য নিম পাতা কিভাবে খাবেন?, চুলকানির জন্য নিমের গুঁড়া ব্যবহার?, নিম পাতা কি ক্ষত সারাতে পারে?, নিম কি প্রতিদিন মুখে লাগানো যায়?, নিম পাউডার চুল গজানোর উপায়?, নিম তেল সরাসরি ত্বকে লাগানো যাবে কি?, খুশকির জন্য নিম পাতার ব্যবহার?, নিম পাতা কি কালো দাগ দূর করে?, নিম পাতার ফেসপ্যাক বানানোর উপায়?, ত্বকের এলার্জিতে নিম ব্যবহার?, নিম পাতা কি চোখের জন্য ভালো?।
বাংলা আইটিটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url